যে জিনিস নিয়ে প্লেনে উঠলে হতে পারে জেল-জরিমানা

বিমান ভ্রমণের সময় লাগেজ বহনে শর্ত জুড়ে দেয় এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো। ফ্লাইটে ভ্রমণ করতে গেলে সেই সকল নিয়ম-কানুন আছে যা আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

আকাশপথে কিছু জিনিস আছে যেগুলো নিয়ে কোনাভাবেই বিমানে ভ্রমণ করা যায় না, আবার কিছু জিনিস আছে যেগুলো ক্যারি অন ব্যাগ (ভ্রমণের সময় যেটি সাথে থাকে) এ রাখা যায় না। তবে লাগেজে বহন করা যায় (যেটি চেক ইনের সময় এয়ারলাইন্সগুলো নিয়ে নেয় এবং ভ্রমণের শেষে লাগেজ বেল্ট থেকে নিয়ে নিতে হয়)।

আজ জেনে নিন বিমানে উঠার সময় হাতব্যাগে যেসব জিনিস নেওয়া নিষিদ্ধ।

বিমানে ভ্রমণের সময় যে বিষয়টি আপনাকে সব সময় মনে রাখতে হবে তা হলো বিমানের কেবিনে অনুমোদিত বহনযোগ্য হাতব্যাগ সম্পর্কে ধারণাটা রাখতেই হবে। আমাদের প্রত্যেকের জানা প্রয়োজন যে বিমানে যাত্রার সময় আপনি কোন কোন জিনিসগুলো হাতব্যাগে রাখতে পারবেন না।

বিমানের হাতব্যাগে যেসব জিনিস নেওয়া যাবে না সেগুলো হলো:

পিস্তল, যে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র (লাইসেন্স করা হলেও) নেইল কাটার, রশি, ব্লেড, মাছ, মাংস, পেন্সিল ব্যাটারি (অবশ্য এটি লাগেজেও দেওয়া নিষেধ), বাটাল, ম্যাচ বাক্স, লাইটার (এই দুটি জিনিস লাগেজেও দেওয়া যাবে না), প্লাস, কাচি, ছুরি, সুই-সিরিঞ্জ, স্ক্রু ড্রাইভার, কাঁটা চামচ, মরিচের গুঁড়া, সেভিং ফোম, ক্রিকেট ব্যাট, অ্যারোসল ইত্যাদি।

বিমান ভ্রমণের সময় টয়লেট্রিজ বা কসমেটিক্স বা জাতীয় তরল দ্রব্য (পেষ্ট, বডি স্প্রে, শ্যম্পু) নেয়ার ব্যাপারে বেশকিছু নিশেধাজ্ঞা আছে, এগুলো অবশ্যই একটি পরিষ্কার সাদা কৌটায় করে নিতে হবে।

এই কৌটা গুলোকে কোয়ার্টার সাইজের জিপার আছে এরকম একটি ব্যাগে রাখতে হবে। টয়লেট্রিজ বা কসমেটিক্স বা জাতীয় তরল দ্রব্য রাখার জন্য কোনো ভাবেই বড় ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে না।

নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে, অনবোর্ড লাগেজে যে কোনো ধরনের ধারালো বস্তু (নেইল কাটার, ছুরি,কাচি ইত্যাদি) নেয়া একদমই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে একদম ছোটখাটো এক্সেসরিজ অনবোর্ড লাগেজে নেয়া যায়। কোনো ছুরি, যদি ধারালো হয় কিংবা ফিক্সড ব্লেড ৬সে:মি: এর বেশি হয় তাহলে সেটি নিয়ে বিমানে ভ্রমণ করা যাবে না।

যেকোনো ধরনের দাহ্যা পদার্থ নিয়ে বিমানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ। এটি খুব স্বাভাবিক বিষয় যে অন্যান্য যেকোনো ভ্রমণের থেকে আকাশপথে ভ্রমণের জন্য বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তাই আতশবাজি, এসিড, ব্যাটারি এ ধরনের দাহ্য পদার্থ, যেসব থেকে খুব সহজেই আগুন ধরতে পারে, বা আগুন ছড়িয়ে পরতে পারে তা নিয়ে বিমানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ।

নিষিদ্ধ তালিকার ৪ নম্বর জিনিসটি হলো আগ্নেয়াস্ত্র, বিমান ভ্রমনের সময় আপনি আপনার সাথে থাকা লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্রটি নিজের সাথে বহন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বিমান কোম্পানীর বিশেষ ফর্ম পূরন করে ঘোষনার মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্রটি নিতে পারবেন। তবে ভ্রমণের সময় এটি আপনার সাথে থাকবে না। গন্তব্য পৌছানোর পর এটি আপনাকে দেয়া হবে।

চুল শুকানো, স্ট্রেইট করা কিংবা কার্লি করা যেকোনো কাজের জন্যই আয়রন প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে নারীদের ট্রাভেল ব্যাগে অয়রন থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্ত বিমান ভ্রমণে গেলে আপনাকে শখের আয়রন খানা বাসাতেই রেখে যেতে হবে। কারণ বিমান ভ্রমণের সময় অয়রন সাথে নেয়া নিষিদ্ধ।

ব্যাক্তিগত বা কাজের প্রয়োজনে হলেও যন্ত্রাংশ টাইপের জিনিসপত্র যেমন ড্রিল মেশিন, স্ক্রু ড্রাইভার, করাত সহ সব ধরনের বিমান ভ্রমণে নেয় নিষিদ্ধ।

আপনার হয়তো মনে হতে পারে নিজের প্রয়োজনীয় বস্তুগুলোর নিরাপত্তা চেক করার জন্য মেটাল ডিটেক্টর প্রয়োজন। কিন্ত মজার বিষয় হলো এই বস্তুটি নিয়ে বিমান ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ।

এয়ারপোর্টের যেকোনো রেস্টুরেন্ট থেকে ফাস্টফুড টাইপের জিনিসপত্র যেমন – বার্গার নিয়ে আপনি বিমানে ভ্রমণ করতে পারবেন। কিন্ত ব্যাপারটি যদি হয় স্যুপ, তাহলে এটি আপনাকে এয়ারপোর্টে রেখেই বিমানে ভ্রমণ করতে হবে কারণ, স্যুপ একটি তরল পদার্থ আর আমরা শুরুর দিকেই জেনেছি যে তরল পদার্থ নিয়ে বিমানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ।

সব স্পোর্টস ইকিউপমেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও নিদৃষ্ট কিছু স্পোর্টস ইকিউপমেন্টের যেমন বেসবল ব্যাট, তীর, ধনুক, ডার্ট এসবের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে, অর্থাৎ যে জিনিসের মাধ্যমে নিজের বা অন্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে এগুলো ক্যারিঅন লাগেজে বহন করা যাবে না।

মূলত হাতব্যাগে যেসব জিনিসপত্রের কথা বলা হয়েছে তা বড় লাগেজে (ব্যাকেটে উল্লেখিত ব্যতিত) নেওয়া যাবে। বড় লাগেজেটি আপনি চেক ইন করার সময় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সে বহন করার জন্য দিয়ে দেবেন। এসব জিনিস চেক ইন লাগেজে আনতে পারলেও হাতব্যাগে আপনি বহন করতে পারেন না।

ডায়াবেটিস রোগীরা যে কোনো জরুরি মুহূর্তে ইনসুলিন বহন করতে পারবেন। বিমানে পানি, দুধ বা এই জাতীয় জিনিস বহন করা নিষিদ্ধ। তবে সঙ্গে খুব ছোট শিশু থাকলে তার খাদ্য দুধ অনুমোদন সাপেক্ষে বহন করা যায়।

বিমানে নারিকেল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, কারণ এটি একটি শক্ত ও ভারী বস্তু আর যে কেউ এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে তাই। এমনকি নারকেলের ফুটো থাকলে, তা থেকে জল গড়িয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে।

নিরাপত্তার কারণে ফ্লাইটে সাধারণত নারিকেল নিয়ে বিমনে ভ্রমণ করতে দেওয়া হয় না। নারিকেলের ভিতর যে তরল থাকে তা কোনও ভাবে বেরিয়ে গেলে তা পিচ্ছিল পৃষ্ঠ তৈরি করতে পারে, যার ফলে কেবিনের নিরাপত্তার ঝুঁকি হতে পারে।

সমস্ত যাত্রী এবং ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, এয়ারলাইন্সগুলোর এমন জিনিস বহন করার উপর বিধিনিষেধ রয়েছে যা সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বা ফ্লাইটে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য অন্যদের নিরাপদ রাখতে, অবশ্যই বিমান চলাচলের সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলাই কাম্য। নিরাপদ ও আরামদায়ক বিমান ভ্রমণ হোক। বিশ্বের আকাশপথ হোক নির্ভাবনার।

সূত্রঃ ঢাকা টাইমস

Leave a Comment

×
Share via
Copy link